ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

হত্যার ৯ মাস পর কঙ্কালের সুত্র ধরে পরকীয়া প্রেমের রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ২

নিজেস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ২৯-১১-২০২৩ ১১:৫১:৪৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-১১-২০২৩ ১২:৪৪:৩০ অপরাহ্ন
হত্যার ৯ মাস পর কঙ্কালের সুত্র ধরে পরকীয়া প্রেমের রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ২ ছবি:অন্য একটি মানব কংকাল

কেরানীগঞ্জের চা দোকানদার রোমান শিকদার হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়, এলাকাবাসী থানা পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ও কোনো সন্ধান পায়নি।

গতো ২১ মে রবিবার সকাল ৯ টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বাস্তা ইউনিয়নের বাঘাশুর গ্রামের সিংহ নদীতে ভেকু দিয়ে মাটি খননের সময় নিখোঁজ রোমান সিকদার (৩৮)এর অর্ধগলিত কঙ্কালের ন্যায় লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ৬ মাস পর ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই, ধরা পড়ে দুই খুনি।

আরো পড়ুনঃ

গাজীপুরে নেশার টাকার জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা,গ্রেপ্তার স্বামী


দীর্ঘদিন ধরে চর পড়ে থাকা বাস্তা ইউনিয়নের বাঘাশুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সিংহ নদীটি, তাই নদী খনন দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকাবাসী, হঠাৎ নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা ও ময়লার স্তূপ সরানোর সময় দেখা যায় একটি মাথাবিহীন গলিত পঁচা মরদেহ- কঙ্কাল। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে জড়ো হন শতশত মানুষ। উৎসুক জনতার ভিড়ে লাশ দেখতে হাজির হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল শিকদার।

প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ তার ভাতিজা রোমান সিকদার (৩৮) কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।তিনি দাবি করেন, এটি তার ভাতিজা রোমানের মরদেহ। লাশ উদ্ধারের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

তবে প্রথমে উদ্ধারকৃত লাশের পরিচয় শনাক্ত ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হন তারা। ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটনের শুরুতেই পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। স্থানীয়রা জানায় লাশটির মাথা ছিল না, হয়তো তার গলা কেটে হত্যা করে এ খালে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। লাশটি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দেখে বোঝার উপায় ছিল না- কার লাশ।মরদেহের পরনে যে শার্টের কিছু ছেড়া অংশ ছিল, সেটা রোমানের শার্ট দাবি করেন রোমানের স্বজনরা। পরবর্তীতে মরদেহের সঙ্গে নিখোঁজ রোমানের সন্তানদের ডিএনএ মিলে গেলে এরপর মরদেহটি রোমানের বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।

তবে হত্যার কারণ ও খুনি শনাক্ত হচ্ছিল না কোনো ভাবেই। তাই মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই সদর দপ্তরের একটি সূত্রের বরাতে জানা যায় পরকীয়ার জের ধরেই খুন করা হয় রোমানকে। পিবিআই কয়েকটি ধাপে তদন্তে নামে কেরানীগঞ্জ এলাকায়। খোঁজ নেওয়া শুরু করেন রোমান সম্পর্কে।

প্রথমেই তারা জানতে পারেন- রোমান স্থানীয় চা দোকানদার ছিলেন। তার সঙ্গে ছলনা (ছদ্মনাম) নামে এক নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। এই প্রেমের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই নারীর কাছে পৌঁছায় তদন্তকারী অফিসাররা। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রোমানের প্রেমিকা ছলনা জড়িত সন্দেহে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। পিবিআই সুত্র মতে পরকীয়ায় জড়িত ঐ নারী বেশ কিছুদিন ধরে রোমানকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। এরমধ্যে ঐ নারীর সঙ্গে একান্ত সময়ে রোমানকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তার স্বামী এবং স্থানীয়রা। তখন রোমানকে ওই নারীকে বিয়ের কথা বললে বিয়েতে রাজি হয়নি রোমান। এবং তার সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন।

সেখান থেকেই রোমানের ওপর ক্ষিপ্ত হন ঐ নারী। এরপর রোমানকে হত্যার পরিকল্পনা সাজান তিনি। ঐ নারী বুঝতে পেরেছিল রোমান তাকে বিয়ে করবে না। তার স্বামীও তাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। সেক্ষেত্রে রোমান বেঁচে থাকলে তারা সংসার করতে পারবেন না- এমন ভাবনা থেকেই রোমানকে হত্যার ছক কষেন ঐ প্রেমিকা ।

এরপর রোমানকে ডেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নৃশংসভাবে হত্যা করা করা হয়। লাশটি যে রোমানের তা যেন কেউ বুঝতে না পারে তা নিশ্চিত করতে খুনের পর দেহ থেকে মাথা আলাদা করা হয়। এঘটনায় জড়িত রোমান সিকদারের সেই পরকীয়া প্রেমিকাসহ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পিবিআই সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুনঃ 

মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে তিন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত


নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ